ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের উৎস থেকে সংগ্রহ করে। এসব দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ মূলধন, অগ্রাধিকার শেয়ার মূলধন, সাধারণ শেয়ার মূলধন এবং সংরক্ষিত আয় অন্যতম। একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এ চারটি উৎসের মধ্যে থেকে সংগ্রহ করে। এরূপ প্রতিটি উৎস থেকে অর্থ সরবরাহকারী বা বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত আয় এবং ঝুঁকির ধরনে ভিন্নতা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ঋণ মূলধন সরবরাহকারীদের প্রত্যাশিত আয় এবং সাধারণ শেয়ার মালিকদের প্রত্যাশিত আয় সমান হয় না। যেহেতু বিনিয়োগকারী বা অর্থ সরবরাহকারীদের প্রত্যাশিত আয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূলধন খরচ হিসেবে গণ্য হয়, সেহেতু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের বিভিন্ন উৎসে মূলধন খরচের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। মূলধন খরচের এই ভিন্নতা অর্থ বিনিয়োগকারী বা সরবরাহকারীদের প্রত্যাশিত আয়ের হারের ভিন্নতা এবং ঝুঁকির ধরনের ভিন্নতাকে নির্দেশ করে। সাধারণত অর্থ সরবরাহকারীরা তাদের বিনিয়োগকে যত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করবে, তাদের প্রত্যাশিত আয়ের হারও তত বেশি হবে। এবার বিভিন্ন উৎসের মূলধন ব্যয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হবে।
ক) ঋণ মূলধন ব্যয়
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান সাধারণত এক বা একাধিক উৎস থেকে ব্যবসায়ের জন্য ঋণ সংগ্রহ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যেমন: মুদির দোকান, চুল কাটার সেলুন, ঔষুধের দোকান ইত্যাদি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ঋণ মূলধনের প্রধান উৎস হচ্ছে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ঋণ। আবার বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের পাশাপাশি বন্ড বা ঋণপত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্থের সংস্থান করে থাকে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে মূলধনের সংস্থান করলে ঋণ মূলধন ব্যয় নির্ণয় খুব সহজ। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক ধার্যকৃত সুদের হার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য মূলধন ব্যয় হিসেবে পরিগণিত হয়।
মনে কর, সোনালী ব্যাংক মুদির দোকানিকে ১০ লক্ষ টাকা ১৫% শতাংশ হারে ঋণ দিতে সম্মত হয়। এক্ষেত্রে মুদির দোকানির ঋণ মূলধন ব্যয় হবে ১৫ শতাংশ। তবে এই হার প্রতিষ্ঠানের জন্য কর পূর্ব-মূলধন ব্যয় হিসেবে পরিগণিত হয়। উল্লেখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাধারণত ঋণ মূলধন বাবদ যে পরিমাণ সুদ পরিশোধ করে, তা কর-পূর্ব মুনাফা থেকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য মুনাফা নির্ধারণ করা হয়। ফলে কোম্পানিকে কম কর দিতে হয়। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে থেকে গৃহীত ঋণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধা নিয়ে আসে। এ সুবিধা বিবেচনা করে কর-পূর্ব ঋণ মূলধন ব্যয়কে সমন্বয় করার প্রয়োজন হয় । নিম্নে বর্ণিত সূত্রের মাধ্যমে কর-পূর্ব মুনাফাকে সমন্বয় করা হয়।
কর- সমন্বয়কৃত ঋণ মূলধন খরচ = করপূর্ব ঋণ মূলধন ব্যয় x (১- কর হার )
মুদির দোকানির করপূর্ব ঋণ মূলধন খরচ ১৫% কে ৩০% করহার দিয়ে সমন্বয় করলে কর-সমন্বয়কৃত ঋণ মূলধন খরচ হবে নিম্নরূপ
কর-সমন্বয়কৃত ঋণ মূলধন খরচ =১৫% (১-৩০ )
= ১৫% × .৭০
= ১০.৫০%
খ) অগ্রাধিকার শেয়ারের ব্যয়
অগ্রাধিকার শেয়ারের ব্যয় নির্ধারণ ঋণ মূলধনের ব্যয় নির্ধারণ থেকে আলাদা। কারণ ঋণ মূলধন এবং অগ্রাধিকার শেয়ারের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে ঋণ মূলধন সরবরাহকারীরা সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ পেয়ে থাকে। অন্যদিকে অগ্রাধিকার শেয়ার মালিকরা নির্দিষ্ট হারে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। তবে কোম্পানি সবসময় অগ্রাধিকার শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ দিতে বাধ্য থাকে না। তবে কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে বাধ্য না থাকলেও পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন করলে অগ্রাধিকার শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। অতএব বলা যায়, অগ্রাধিকার শেয়ারের ব্যয় নির্ভর করে শেয়ার মালিকদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশের উপর।
অগ্রাধিকার শেয়ারের লভ্যাংশ এবং শেয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের অনুপাত নির্ণয় করলে অগ্রাধিকার শেয়ারের ব্যয় পাওয়া যায়। সূত্রের সাহায্যে নিম্নরূপে নির্ণয় করা যায়।
অগ্রাধিকার শেয়ারের ব্যয় =(শেয়ার মালিকদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশশে/শেয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ)×১০০
উদাহরণ : একটি কোম্পানি ১,০০০ টাকা লিখিত মূল্যের ১০ শতাংশ অগ্রাধিকার শেয়ার বাজারে বিক্রির চিন্তা করছে। প্রতিটি শেয়ার বিক্রি থেকে কোম্পানি ৮২০ টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা করে। বর্ণিত তথ্যাদি ব্যবহার করে উক্ত শেয়ারের ব্যয় নিম্নরূপে নির্ধারণ করা যায়। অর্থ
অগ্রাধিকার শেয়ারের ব্যয়= {নোট: ১০০০ এর ১০% /প্রতি শেয়ারের বিক্রয় মূল্য}
=১২.২০%
গ) সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয়
তোমরা জেনেছ যে বাজারে সাধারণ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানি তার মূলধনের সংস্থান করে। আবার কোম্পানি ব্যবসার পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে অর্থের সংস্থান করতে পারে। উল্লেখ্য পুঞ্জীভূত মুনাফা, অবন্টিত মুনাফা এবং সংরক্ষিত তহবিল একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থের অন্যান্য উৎস থেকে সাধারণ শেয়ার মূলধনের পার্থক্য আছে। প্রথমত, অন্যান্য উৎসের ন্যায় কোম্পানি ইক্যুইটি মূলধনের উপর সবসময় লভ্যাংশ দিতে বাধ্য থাকে না। দ্বিতীয়ত, লভ্যাংশ দিলেও প্রদত্ত লভ্যাংশের পরিমাণ বা হার সবসময় সমান থাকে না। এসব কারণে সাধারণ শেয়ার মূলধনের ব্যয় নির্ধারণ অন্যান্য উৎসের ব্যয় নির্ধারণ থেকে আলাদা হয়ে থাকে।
কোম্পানির শেয়ার মালিকরা সাধারণত লভ্যাংশ এবং শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি থেকে লাভ প্রাপ্তির আশায় শেয়ার কেনে। ফলে শেয়ার মূলধনের ব্যয় বলতে বিনিয়োগকারীদের বা শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ এবং শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত লাভ থেকে প্রত্যাশিত আয়ের হারকে বুঝানো হয় ।
সাধারণ মূলধনের ব্যয় নির্ণয়ে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমত, ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ নির্ধারণ করা জটিল কাজ যেহেতু লভ্যাংশ হার অগ্রাধিকার শেয়ারের মতো নির্দিষ্ট থাকে না। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে কোম্পনির আয় এবং লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার অনুমান করা আরেকটি জটিল কাজ।
এসব জটিলতার কারণে সাধারণ শেয়ার মূলধনের ব্যয় নির্ধারণের একক কোনো পদ্ধতি নেই। বিভিন্ন অনুমানের উপর ভিত্তি করে মূলধন ব্যয় নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়। নিম্নে সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় নির্ণয়ের সহজ দুটি পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
শূন্য লভ্যাংশ বৃদ্ধি পদ্ধতি
এটি মূলধন ব্যয় নির্ণয়ের একটি সহজ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মনে করা হয় কোম্পানির বর্তমান বছরে যে লভ্যাংশ দিয়েছে, ভবিষ্যৎ বছরগুলোতেও সমপরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। অর্থাৎ শেয়ার মালিকদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশের কোনো পরিবর্তন হবে না। উদাহরণস্বরূপ, একটি কোম্পানি এ বছর প্রতি শেয়ারে ১০ টাকা লভ্যাংশ দিলে আগামী বছরগুলোতেও কোম্পানি শেয়ার মালিকদের ১০ টাকা করে লভ্যাংশ দেবে বলে অনুমান করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রতি শেয়ারে প্রদত্ত লভ্যাংশকে শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য দিয়ে ভাগ করলে সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় পাওয়া যায়। সূত্রের সাহায্যে নিম্নে দেখানো হলো।
সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় =(লভ্যাংশ১/শেয়ার মূল্য০)
এখানে লভ্যাংশ ১ = বছরের শেষে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ
শেয়ার মূল্য ০= শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য
উদাহরণ : একটি কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য ১১০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এ বছর প্রতি শেয়ারে ১০ টাকা হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানির সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় নিম্নরূপ নির্ণয় করা যায়:
সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় =
=০.০৯০৯
=৯.০৯%
স্থিরহারে লভ্যাংশ বৃদ্ধি পদ্ধতি
ভবিষ্যতে বছরগুলোতে লভ্যাংশের কোনো পরিবর্তন হয় না এমন কোম্পানি বাস্তবে কম দেখা যায়। সাধারণত কোম্পানিগুলো একেক বছর বিভিন্ন হারে লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। স্থির হারে লভ্যাংশ বৃদ্ধি পদ্ধতি এমনি একটি পদ্ধতি। যাতে ধরে নেয়া হয় যে কোম্পানি প্রতিবছর সমপরিমাণ লভ্যাংশ দেয় না। তবে এ পদ্ধতির কিছু অনুমিত শর্তাবলি রয়েছে।
শর্তাবলিতে ধরে নেয়া হয়, কোম্পানির লভ্যাংশ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাবে এবং এই বৃদ্ধির হার প্রতিবছর একই পরিমাণ থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোম্পানি যদি বর্তমান বছর ১০ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করে এবং কোম্পানিটির অনুমিত লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার যদি ১০% হয়, তবে
১ বছর পর প্রত্যাশিত লভ্যাংশ হবে ১০ (১+০.১০) = ১১ টাকা
২ বছর পর প্রত্যাশিত লভ্যাংশ হবে ১১ (১+০.১০)= ১২.১ টাকা
৩ বছর পর প্রত্যাশিত লভ্যাংশ হবে ১২.১ (১+ ০.১০) = ১৩.৩১ টাকা।
এভাবে প্রতিছর প্রত্যাশিত লভ্যাংশ ১০% হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সূত্রের মাধ্যমে স্থির হারে লভ্যাংশ বৃদ্ধি পদ্ধতিতে সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় নিম্নরূপে নির্ণয় করা যায় ।
সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় = (লভ্যাংশ১/ শেয়ার মূল্য০) + বৃদ্ধির হার
এখানে লভ্যাংশ১ = লভ্যাংশ০ (১+ বৃদ্ধির হার)
লভ্যাংশ ০ = বর্তমান বছরের লভ্যাংশ
শেয়ার মূল্য ০ = শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য
বৃদ্ধির হার = লভ্যাংশ বৃদ্ধির হার ।
উদারহণ : একটি কোম্পানি সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় নির্ণয় করতে চায়। কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য ১৫০ টাকা। কোম্পানিটি সদ্য সমাপ্ত বছরে প্রতি শেয়ারে ১৫ টাকা হারে লভ্যাংশ দেয়। অতীত রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় কোম্পানির লভ্যাংশ গড়ে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। কোম্পানির সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় নিম্নরূপে নির্ধারণ করা যায়।
সাধারণ শেয়ার মূলধন ব্যয় = {(লভ্যাংশ১/ শেয়ার মূল্য০)+বৃদ্ধির হার}×১০০
= ১৫.৫%
ঘ) সংরক্ষিত আয়ের ব্যয়
কোম্পানির অর্থায়নের অন্যতম একটি উৎস হচ্ছে সংরক্ষিত আয়। কোম্পানি প্রতিবছর যে পরিমাণ টাকার মুনাফা অর্জন করে, সেটির পুরোটা শেয়ার মালিকদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বণ্টন না করে কিছু অংশ প্রতিষ্ঠানে রেখে দেয় ।
উদাহরণস্বরূপ: একটি কোম্পানি কোনো বছরে ৫০ লক্ষ টাকা মুনাফা করলে এবং উক্ত মুনাফা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যবসায়ে রেখে দিলে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যবসায়ের সংরক্ষিত আয় হিসেবে গণ্য হবে। এভাবে সংরক্ষিত আয় থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হয়। সংরক্ষিত আয় থেকে অর্থায়ন করা হয় বলে অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে সংরক্ষিত আয়ের কোনো ব্যয় নেই। কিন্তু এ ধারণাটি ভুল। কারণ, এ সংরক্ষিত আয়ের আপাতদৃষ্টিতে বাহ্যিক কোনো ব্যয় না থাকলেও এর একটি সুযোগ ব্যয় রয়েছে।
সংরক্ষিত আয়ের সুযোগ ব্যয় বুঝার আগে সুযোগ-ব্যয়ের সাধারণ ধারণা বুঝা দরকার। মনে কর, তোমার বাবার কোনো একটি ব্যাংকে ১০ লক্ষ টাকা জমা আছে। তোমার ভাইয়া তোমার বাবাকে একদিন বলল, বাবা, তোমার একাউন্টে যে ১০ লক্ষ টাকা পড়ে আছে, সেটা আমাকে দাও, আমি ব্যবসা করব। তোমার ভাইয়ার এ কথাটি ঠিক নয়। কারণ টাকাটা আসলে অলস পড়ে নেই, ব্যাংক এই ১০ লক্ষ টাকার উপর একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করবে। ফলে তোমার বাবা যদি তোমার ভাইয়াকে টাকাটা দিয়ে দেন, তাহলে সুদ বাবদ যে আয় হতো, সেটা পাবেন না। ফলে সুদ বাবদ আয় না পাওয়াটা তোমার ভাইয়াকে ব্যবসার কাজে টাকা দেওয়ার একটি সুযোগ ব্যয় ।
অনুরূপভাবে কোম্পানির আয় শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন না করে রেখে দিলে শেয়ার মালিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে এর একটি সুযোগ ব্যয় থাকে। কোম্পানির অর্জিত মুনাফা কোম্পানিতে সংরক্ষিত আয় হিসেবে না রেখে শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করলে শেয়ার মালিকরা সেই অর্থ অন্যত্র বিনিয়োগ করে অতিরিক্ত আয় করতে পারত। ফলে কোম্পানি অর্জিত মুনাফা বা আয় বণ্টন না করলে শেয়ার মালিকরা উক্ত অর্থের অন্যত্র বিনিয়োগে প্রাপ্ত আয় থেকে বঞ্চিত হয়। এখানে অর্থের অন্যত্র বিনিয়োগে প্রাপ্ত আয় থেকে বঞ্চিত হওয়াটাকে সংরক্ষিত আয়ের সুযোগ ব্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোম্পানি অর্জিত মুনাফার পুরোটাই শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করলে এবং শেয়ার মালিকরা সেই অর্থ অন্যত্র বিনিয়োগ করে ১৫ শতাংশ হারে আয় করতে পারলে ১৫ শতাংশ হবে কোম্পানির সংরক্ষিত আয়ের সুযোগ- ব্যয়।
আরও দেখুন...